কেন পড়বেন প্যারাডক্সিকাল সাজিদ বইটি

বইয়ের নাম :প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ
লেখকের নাম : আরিফ আজাদ

কেন পড়বেন প্যারাডক্সিকাল সাজিদ বইটি


যদিও অনেকে মনে করেন যে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইটি বিশ্বাসী বা ইমানদার, অবিশ্বাসী বা বেঈমান -এ দুয়ের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করে কিংবা এর জন্যেই লেখা এই বইটি।  তঁবে আমার তা মনে হয়নি। শুধুমাত্র এই কারণেই লেখা হয়নি বইটি। 
প্রিয় পাঠক আমি কেবল বইয়ের মূলধারা তুলে ধরবো আর তা একান্তই আমার নিজের মতো করে, ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।  


বইটি পুরোপুরি পড়লে আপনার নিজের মস্তিষ্কের গভীরে কিছু বিষয় পরিস্কার হয়ে যাবে। 

যথা- একজন বিশ্বাসীর জন্য তার ঈমান বা বিশ্বাস নিয়ে তর্ক কিংবা যুক্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়ার কিংবা তার চেষ্টা করার কোনো আদৌ যুক্তি আছে কি না তা পরিস্কার হয়ে যাবে।  (আমি একজন ঈমানদার) এই কথাটি বলার ক্ষেত্রে আপনার আর কোনো যুক্তির প্রয়োজন নাই সেটা ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন। 


বিশ্বাস মানুষকে কতটা নমনীয় ও কোমলপ্রাণ করে তার উদাহরণ দেখতে পারবেন,  একজন অবিশ্বাসীর জন্য আপনার ঘৃণা হওয়া দরকার নাকি তার উল্টো মায়া হওয়া দরকার সেটা বুঝতে সক্ষম হবেন। 


বিজ্ঞানকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক করে ইসলামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার ব্যাপারটা মোটেও নতুন নয়,  দুঃখজনক হলেও সত্য যে যারা বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের সংঘর্ষ বাধিয়ে নিজেদের বইয়ে হাজার যুক্তি উপস্থাপন করে পাঠকের কাছে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদের এসকল প্রশ্নের যথাযথ জবাবের সাথে সুন্দর ও মানানসই ব্যাখ্যার বই বাংলা ভাষায় খুবই কম পাওয়া যায়।  তার যথাযথ অভাব পূরণে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইয়ের তুলনা হয় না। 


যারা ইসলামে বিশ্বাস করেন আর ধর্মীয় অনুশাসনের ভেতরে নিজেদের জীবনযাপন পরিচালনা করেন, তাদেরকে  এ যুগের নব্য নাস্তিকেরা অশিক্ষিত মনে করেন।  ধর্মে যারা বিশ্বাস করেন তাদেরকে উপহাসের সুরে ধর্মান্ধ বলে আখ্যায়িত করেন।  নাস্তিকেরা এসব করে থাকেন বিজ্ঞানের যুক্তিতে, তাদের মূল হাতিয়ার হল যুক্তি। 


বইটিতে লেখক দুইটি চরিত্র এনেছেন,  সাজিদ ও সাজিদের বন্ধুকে একে অপরের বিপক্ষে দার করিয়ে সে সকল প্রশ্ন উত্তোলন করেছেন এবং খুবই সুন্দরভাবে একটি একটি প্রশ্নের জবাব পরিস্কার করে দিয়েছেন৷ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দুই বন্ধুর যুক্তি তর্কের মাধ্যমে প্রথমদিকেই পাঠককে আকর্ষিত করবে বইটির গভীরে প্রবেশ করতে। 


ইসলাম বা বিশ্বাসীদেরকে নাস্তিকরা বিজ্ঞান দিয়ে বিচার করে,  বিজ্ঞানের বিভিন্ন থিউরি দিয়ে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক করে ইসলামের সাথে তর্ক বাধিয়ে ইসলামকে ছোট করার চেষ্টা করে।  এখানে একটি দিক আমার খুবই ভালো লেগেছে, লেখক সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন যে নাস্তিকরা যে বিজ্ঞানের থিউরি দিয়ে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সেই বিজ্ঞানই কিন্তু দিনে দিনে পরিবর্তিত।  এক থিউরির সাথে অন্য থিউরির ঝগড়া।  এক বিজ্ঞানীর সাথে অন্য বিজ্ঞানীর যৌক্তিক সংঘর্ষ।  কিন্তু ইসলামের এখানেই বিজয়। ইসলাম সেই শুরু থেকে আজও পর্যন্ত পরিপূর্ণ একটি ধর্ম। 


বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের নাস্তিকদের আসল পরিচয়। 


বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে যারা নিজেদেরকে নাস্তিক দাবি করে, তারা কি আসলেই নাস্তিক?  

নাস্তিক আসলে কে?  নাস্তিক কাহাকে বলে? 

ডিকশিনারিরতে "নাস্তিক কাহাকে বলে" জানতে চাইলে এর সরল উত্তর আসে ( যে ব্যক্তির কোনো ধর্ম নাই সে ধর্মনিরপেক্ষ বা নাস্তিক) তাহলে এই অর্থ মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের নাস্তিকদের দিকে একটু নজর দিলেই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যায়।  

এরা আসলে নাস্তিক নয়, এরা ইসলামের সমালোচক,  আর তা হয় কেন? তারা ইসলামের সমালোচনা করে কারণ তাদের কুকর্মে বাধাগ্রস্ত করে ইসলাম,  নারীদেরকে স্বাধীনতার নামে ভোগ করতে বাধা দেয় ইসলাম।  মদের বোতল নিয়ে রাতভর ডুবে থাকতে বাধা দেয় ইসলাম। আর এসকল কারণেই মূলত তারা ইসলামের সমালোচনা করে থাকে। 


রাসুল সাঃ এর পবিত্র জীবন নিয়ে তাদের প্রশ্ন,  যেখানে নিজে আল্লাহ'তাআলা নিজের রাসুলের চরিত্রের পবিত্রতার ঘোষণা করেছেন।  

আম্মাজান আয়শা সিদ্দিকা রাঃ কে নয় বছর বয়সে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করে নাস্তিকরা, লেখক বইটিতে নাস্তিকদের এই জ্ঞানহীন প্রশ্নের অসাধারণ উত্তর দিয়েছেন। যেহেতু বাংলাদেশের নাস্তিকরা এইসকল প্রশ্ন করছে তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই তাদের জন্য উলটো প্রশ্ন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বিয়ে করেন, তখন উনার স্ত্রীর বয়স ছিলো আট বছর।  কিন্তু নাস্তিকরা কেন এই ব্যাপারে প্রশ্ন করে না।  কেন বঙ্গবন্ধুকে চরিত্রহীন বলে না? 


প্রথমত আসল নাস্তিক যারা তারা ধর্ম নিয়ে যদি প্রশ্ন তোলে তঁবে সকল ধর্ম নিয়েই তুলবে কিন্তু তা না হয়ে শুধুমাত্র ইসলাম নিয়েই তাদের চুলকানি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তারা বলে অন্যান্য ধর্মে প্রশ্ন করার মতো কিছু নেই।  তাহলে তাদের উত্তর অনুযায়ী অন্যান্য ধর্ম সত্য। 

অন্যান্য ধর্ম যদি তাদের কাছে সত্য হয় তাহলে তারা নাস্তিক কেন? এই প্রশ্নের আবার জবাব নেই তাদের কাছে। 

হাইস্যকর। 

প্রিয় পাঠক!  আম্মাজান আয়শা সিদ্দিকা রাঃ এর ব্যাপারে নাস্তিকদের প্রশ্নের চমকপ্রদ জবাব জানতে আপনাকে বইটি পড়তে হবে।  এটি একটি  রিভিউ লেখা তাই এখানে তা যোগ করছি না। 


স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন ও তার জবাব,  স্রষ্টা কেন মন্দের দায় নেন না?

মহান আল্লাহ দয়ালু হলে জাহান্নাম কেন?

নাস্তিকেরা হ্যাঁ অথবা না উত্তর দাবি করে যে সকল প্রাশ্ন করে, তার সুন্দর জবাব সহ বহু টেকনিক্যাল বিষয় অনেক সহজ করেই উপস্থাপন করেছেন লেখক। 


ইসলামি উপন্যাসের আদলে লেখা বইটির প্রতিটি লাইনে পাবেন অসাধারণ সব যুক্তি বিজ্ঞানের সমাধান।  একজন বিশ্বাসী মানুষ বিভিন্ন যুক্তির থিউরির প্যাঁচে জড়িয়ে তার বিশ্বাসের ঘাটতি হয়ে তারপর নিজে নাস্তিক হয়ে যাওয়া, তারপর আবার অনেক গবেষণার পর নাস্তিকতা থেকে সঠিক পথে ফিরে সংগ্রামী জীবন চালিয়ে যাওয়ার এক অসাধারণ চিত্র দেখবেন এই বইটিতে।  


নাস্তিকদের আনাগোনা এই সময়ে তাদের ঘৃণ্য মতবাদ সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রত্যেকের টাইমলাইনে ঘুরে ফিরে সব সময়।  তাই আমি মনে করি বইটি সকলের পড়া উচিৎ যারা ধর্ম নিয়ে চিন্তা করেন। পাশাপাশি নাস্তিকদের ঘৃন্য মতবাদ দেখে যাদের মনে প্রশ্ন জাগে তাদের জন্য এই বইটি অবশ্যই পড়া উচিৎ। 

কেন পড়বেন প্যারাডক্সিকাল সাজিদ বইটি


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url